চামড়াজাত পণ্য ও জুতা রপ্তানিতে সরকার ১৫ শতাংশ নগদ সহায়তা বা প্রণোদনা দেয়। এই প্রণোদনার ওপরে বর্তমানে ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর কাটা হয়। আগামী ২০২৪–২৫ অর্থবছরের বাজেটে এই উৎসে কর স্থায়ীভাবে মওকুফের দাবি জানিয়েছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া চামড়া রপ্তানি ও প্রতিযোগিতা–সক্ষমতা বাড়াতে বাজেটে আরও কিছু সুবিধা চেয়েছেন তাঁরা।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে বিবেচনার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে বেশ কিছু প্রস্তাব দেয় চামড়া খাতের তিন সংগঠন। তারা চামড়া রপ্তানিতে প্রণোদনার পরিমাণ বাড়ানো, চামড়া প্রক্রিয়াজাতের কাঁচামাল হিসেবে রাসায়নিক আমদানিতে শুল্ক-ভ্যাট কমানোসহ কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছে।
জাতীয় অর্থনীতিতে চামড়া, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা (জুতা) শিল্প একটি রপ্তানিমুখী শ্রমঘন খাত। বর্তমানে রপ্তানি বাণিজ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয় আসে এ খাত থেকে। তবে সম্ভাবনাময় খাতটি বর্তমানে বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানা চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। এ খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে চামড়া পণ্যের দুটি বৃহৎ বাজার তথা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। এ ছাড়া গত দুই বছরে পণ্য উৎপাদন খরচ কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সে তুলনায় পণ্যের দাম বাড়েনি। এ অবস্থায় রপ্তানিকারকদের প্রতিযোগিতা–সক্ষমতা বাড়াতে বিভিন্ন শুল্ক-অশুল্ক বাধা এবং অন্যান্য রপ্তানি খাতের সঙ্গে বিদ্যমান অসামঞ্জস্য দূর করা প্রয়োজন।
‘কর মওকুফে সক্ষমতা বাড়বে’
বাজেট প্রস্তাবে চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুতকারকদের সংগঠন লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলএফএমইএবি) বলেছে, সরকারের নীতি সহায়তার অংশ হিসেবে পণ্য রপ্তানিতে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। এখানে ১০ শতাংশ উৎসে কর কাটা যৌক্তিক নয়; এতে কার্যকর প্রণোদনার হার কমে যায়। এটি স্থায়ীভাবে মওকুফ করা হলে বৈশ্বিক বাজারে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়বে।
চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে বন্ডসুবিধাভেদে ভিন্ন ভিন্ন করহার রয়েছে। ফলে নতুন কিংবা ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলো এখান থেকে কর সুবিধা নিতে পারে না। এ জন্য রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত সব ধরনের শিল্প কাঁচামালের জন্য সমহারে মোট ১ শতাংশ করে আমদানি কর নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে এলএফএমইএবি। এতে লিড টাইম ২০ দিনের মতো কমে রপ্তানির হার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
দেশে চামড়ার জুতা এবং সিনথেটিক ও ফেব্রিকসের তৈরি জুতার জন্য প্রয়োজনীয় পশ্চাৎ সংযোগশিল্প তৈরি হয়নি। এ খাতে আমদানিনির্ভরতার কারণে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে। তাই দেশে পশ্চাৎ সংযোগশিল্প প্রতিষ্ঠায় উৎসাহ দিতে এ খাতে আয়কর অবকাশ–সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন বলে জানায় এলএফএমইএবি। এ ছাড়া ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য সাধারণ বন্ডেড ওয়্যার হাউস স্থাপন ও অগ্নিনিরাপত্তা সরঞ্জাম আমদানিতে শুল্ক হার কমানোর দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
অন্যদিকে কাঁচা চামড়া ক্রয়-বিক্রয়ে উৎসে কর আরোপ সম্পর্কে স্পষ্টীকরণের অনুরোধ জানিয়েছে চামড়া খাতের আরেক সংগঠন বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএলএলএফইএ)। সংগঠনটি বলেছে, রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাঁচা চামড়া ক্রয়ে উৎসে কর থাকার কথা না। কিন্তু সম্প্রতি চট্টগ্রামের একটি প্রতিষ্ঠানে উৎসে কর আদায়ের দাবিতে কাঁচা চামড়া ক্রয়সংক্রান্ত নথি জব্দ করেছেন কর বিভাগের কর্মকর্তারা। ফলে কাঁচা চামড়া ক্রয়ে নতুন করে উৎসে কর আরোপ করা হয়েছে কি না, বাজেটে সে সম্পর্কে স্পষ্ট বার্তা থাকা প্রয়োজন।
রাসায়নিকে ভ্যাট কমানোর দাবি
বর্তমানে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের অপরিহার্য রাসায়নিক আমদানির ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট রয়েছে। এই হার কমিয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন বা বিটিএ। সংগঠনটি বলেছে, ভ্যাট কমালে চামড়া রপ্তানি বাড়বে এবং অবৈধ পথে রাসায়নিক আমদানি কমবে।
২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে চামড়া রপ্তানিতে উৎসে কর শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ করা হয়। এটিকে আবার আগের জায়গায় ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিটিএ। সাভারে অবস্থিত চামড়াশিল্প নগরীতে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানিতে প্রণোদনা হার ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন। এ ছাড়া চামড়াশিল্প নগরের কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারের (সিইটিপি) জন্য রাসায়নিক ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা চেয়েছে সংগঠনটি।
Source: Prothom Alo