যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টা শুল্কসহ বাণিজ্য আলোচনায় বাংলাদেশে পিছিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। যদিও তিনি মনে করেন, আলোচনা ও দর–কষাকষির জায়গা এখনো শেষ হয়ে যায়নি।
গত রবিবার, ২১শে জুলাই ২০২৫ তারিখে ‘যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক: কোন পথে বাংলাদেশ’শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর এ কথা বলেন। প্রথম আলো রাজধানীর এক হোটেলে এই গোলটেবিলের আয়োজন করেছে। সেখানে দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, গবেষকেরা অংশ নিয়েছেন।
নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রে জুতা ও উপকরণ রপ্তানি করি। এসব পণ্যের জন্য যুক্তরাষ্ট্র একক বৃহত্তম বাজার। সেখানে প্রতিবছর আমাদের প্রায় ৪০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়।’ নাসিম মঞ্জুর আরও বলেন, ‘তার চেয়েও বড় বিষয়, সেখানে প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি। এক বছর আগে যা ছিল ২৮ কোটি ডলার, সেটা এখন হয়ে গেছে প্রায় ৪০ কোটি ডলার। এ ধরনের প্রবৃদ্ধি পৃথিবীর আর কোনো বাজারে আছে বলে জানা নেই।’
যুক্তরাষ্ট্রের বাজার সম্পর্কে নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘ইউরোপের বাজারে প্রবৃদ্ধি কমে গেছে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে কমেনি। মাঝে মাঝে আমি খুব ব্যথিত হই, যখন আমাদের বলা হয় নতুন বাজার খুঁজে বের করুন। কিন্তু আমরা কীভাবে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভোক্তাপণ্যের বাজার ছেড়ে রাতারাতি নতুন বাজার পাব—এটা সম্ভব নয়।’
চীন প্রসঙ্গে নাসিম মঞ্জুর বলেন, চীন থেকে কিছু উৎপাদন সরে আসছে। যুক্তরাষ্ট্র চীনের পণ্যে যতই শুল্ক হ্রাস-বৃদ্ধি করুক না কেন, চীনে এ ধরনের শ্রমঘন শিল্প থাকবে না। কারণ, চীন-ই তা চায় না। এই শিল্প স্থানান্তরের সুবিধা বাংলাদেশের পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল, এখনো আছে; কিন্তু বাংলাদেশে গত তিন থেকে ছয় মাসে তেমন কোনো পরিবেশ দেখা যায়নি।
দেশের রপ্তানিমুখী শিল্প সম্পর্কেও কথা বলেন নাসিম মঞ্জুর। তিনি বলেন, ‘অনেক ক্রেতা ক্রয়াদেশ দেওয়ার পর স্থগিত করেছে। তারা এখন ধীরেসুস্থে কাজ দিতে চায়। এমনকি তারা এ–ও জিজ্ঞেস করছে, “যদি ট্রাম্পের নতুন পাল্টা শুল্ক আরোপিত হয়, তোমরা (বাংলাদেশি রপ্তানিকারক) তার কত ভাগের দায় নিতে পারবে।” কিন্তু বিষয়টি হলো, বাংলাদেশের রপ্তানিকারকেরা খুবই কম মুনাফায় কাজ করেন। এই বাস্তবতায় ৩৫ বা ৩২ শতাংশ শুল্কের ভাগ বহন করার মতো সক্ষমতা আমাদের নেই।’
এই পরিপ্রেক্ষিতে নাসিম মঞ্জুরের মত, যুক্তরাষ্ট্রের বাজার উপেক্ষা করে রপ্তানির ধারাবাহিকতা ধরে রাখা সম্ভব হবে না। কেননা বৈশ্বিক বাজারে পণ্যের সোর্সিং যুক্তরাষ্ট্রের বাজার মাথায় রেখেই করা হয়।
এই বাস্তবতায় বাংলাদেশের করণীয় সম্পর্কে নাসিম মঞ্জুর বলেন, বাংলাদেশের যা আছে, তার সেরাটা ব্যবহার করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘দেশে অভিজ্ঞ বাণিজ্য–বিশেষজ্ঞ আছেন। আমরা তাঁদের মতামত নিতে পারি। আমি শুনে হতাশ হয়েছি যে সেলিম রায়হানের মতো বাণিজ্য–বিশেষজ্ঞকে কাজে লাগানো হচ্ছে না। ভারত, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান—সবাই নিজেদের বিশেষজ্ঞদের কাজে লাগাচ্ছে।’ তাঁর প্রশ্ন, ‘আমরা কেন পিছিয়ে থাকব। বাণিজ্যিক–বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে, লবিস্ট নিয়োগ দিয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনে আমাদের যাঁরা ঘনিষ্ঠ আছেন, সেই পক্ষগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে আমরা সামনে এগোতে পারি। আমাদের কূটনৈতিক চ্যানেল যথেষ্টভাবে কাজে আসছে না।’
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের উচিত হবে কাঠামোগত চুক্তির আলোচনায় যাওয়া। পুরোটা বাংলাদেশ পাবে না, তা ঠিক। কিন্তু কিছু না কিছু নিশ্চিত করতে হবে।