ফুটওয়্যার বাণিজ্যে শুরু হোক পথচলা
(কাজী রওশন আরা; রাফিউল আলম)
জামাল সাহেব একজন তৈরী পোশাক ব্যবসায়ী। বিগত কয়েক বছরে তার ব্যবসা বেড়েছে কয়েকগুণ। নিজের কোম্পানীর বাণিজ্যিক দিগন্ত ফুটওয়্যার পর্যন্ত প্রসারিত করাই এখন তার আশা। তিনি জানেন কিভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে হয়, লোকবল নিয়োগ থেকে শুরু করে উৎপাদন পরিকল্পনা ও রপ্তানী ব্যবস্থাপনা; সবকিছুই তার নখদর্পণে।
তিনি মনে করেন পোশাক শিল্পে তার লব্ধ অভিজ্ঞতা ফুটওয়্যার এর ক্ষেত্রেও কাজে আসবে। কিন্তু জুতা উৎপাদন শিল্পের উপর পড়াশোনা করে দেখেছেন যে, এই দুই শিল্পের উৎপাদন পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনায় রয়েছে বিস্তর ব্যবধান। শ্রমিকের প্রয়োজনীয় দক্ষতা, উৎপাদন পরিকল্পনা বা লে-আউট প্ল্যান, কাঁচামাল সংরক্ষণ থেকে ফিনিশড জুতা রপ্তানী, সবক্ষেত্রেই তার বর্তমান ধ্যান ধারণায় প্রয়োজন হতে পারে ব্যাপক পরিবর্তন বা পরিমার্জন।
যেহেতু, ফুটওয়্যার ডিজাইন গার্মেন্টস ডিজাইন থেকে অপেক্ষাকৃত জটিল, সেহেতু ডিজাইনে সামান্য বিচ্যুতি কমিয়ে দিতে পারে ক্রেতার পায়ে স্বস্তি এবং স্বাচ্ছন্দ। এজন্য জুতায় কোন ধরণের কাঁচামাল ব্যবহার করা হবে তা আগে থেকেই পরিকল্পিত থাকতে হবে। জুতার সাইজিং সিস্টেম সম্পর্কে ভাল ধারণা থাকাও আবশ্যক। সাধারণত ইউএস সিস্টেম, ইংলিশ সিস্টেম, প্যারিস সিস্টেম প্রভৃতি সাইজিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। জুতা ডিজাইন করার সময় টো স্প্রিং, হিল স্প্রিং, জয়েন্ট গার্থ এর পরিমাপ ঠিক করে নিলে কম্পোনেন্ট তৈরী সহজ হবে।
কাঁচামাল চামড়া হলে তাতে ইলাস্টিসিটি এবং প্লাস্টিসিটির ভারসাম্য থাকতে হবে। ইলাস্টিসিটি কম থাকলে জুতা আকার ধরে রাখতে পারেনা। প্লাস্টিসিটি কম হলে পায়ের আকার অনুযায়ী জুতার আকার পরিবর্তন হয়না, ফলে দীর্ঘ সময় ধরে তা ব্যবহার করলে পায়ে নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে। জুতার আপার লেদারে লাস্টিং অপারেশনে হিটিং এবং পরবর্তী পর্যায়ে স্টিমিং করে জুতার থ্রি-ডি আকার আনা হয়।
স্টিচিং, লাস্টিং, পিনিং, রিভেটিং, আইলেটিং প্রভৃতি অপারেশনের জন্য আগে থেকেই লেদারের স্থায়ীত্ব পরীক্ষা করে নিতে হবে। কাঁচামালের ত্রুটি এক্ষেত্রে পণ্যের গুনাগুণে প্রভাব ফেলে। একই জোড়ার জুতায় কালার ম্যাচিং করা বেশ চ্যালেঞ্জিং। কম্পোনেন্ট কাটিংয়ের সময় লেদারের রঙ এর দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখা আবশ্যক। একই জোড়ার দুইটি কম্পোনেন্ট সমপরিমাণ তাপে হিটিং করতে হবে, যাতে ফিনিশিং কোট গলে কালার ব্লিড না করে।
চামড়ার গুণাগুণের উপর জুতার কার্যক্ষমতা অনেকাংশে নির্ভর করে। যেহেতু হাঁটার সময় প্রতি পদক্ষেপে জুতার উপর ইম্প্যাক্ট লোড পড়ে, সেহেতু লেদারের ঘর্ষণ প্রতিরোধ ক্ষমতা, ফ্লেক্স ক্র্যাক রেসিস্ট্যান্স, স্টিচ টিয়ারিং রেসিস্ট্যান্স, টেনসাইল স্ট্রেংথ ইত্যাদি লট অনুযায়ী পরীক্ষা করে নিতে হবে। এছাড়া সেলাইয়ে, জুতার আইলেটে এবং গার্থ লাইন বরাবর ক্রমাগত চাপ পড়ে, এজন্য এসব জায়গার টিয়ারিং স্ট্রেংথ জানা অতি প্রয়োজনীয়। চামড়ার এই বৈশিষ্ট্যগুলি পরীক্ষা করার কাজে নিয়োজিত আছে বেশকিছু জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক টেস্টিং অর্গানাইজেশন।
স্পোর্টস, আর্মি এবং সেফটি ফুটওয়্যার উৎপাদনে সোলিং ম্যাটেরিয়ালের স্লিপ রেসিস্ট্যান্স, ইনসুলেশন, এবং স্থায়িত্ব থাকা আবশ্যক। নির্দিষ্ট কিছু ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করে এইসব বৈশিষ্ট্য নিশ্চিত করা যায়।
জুতার প্রকৃত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য স্টোরেজের তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা সহনীয় মাত্রায় থাকতে হবে। তাপমাত্রা বেশি হলে ফিনিশ কোটিং গলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং অতিরিক্ত আর্দ্রতায় ফাঙ্গাস জন্মাতে পারে। প্যাকেজিংয়ে যেন জুতার আকৃতি চাপে পড়ে নষ্ট না হয় সেজন্য জুতার ভিতরে আর্দ্রতা নিরোধক টিশু পেপার দেয়া উচিৎ।
সবকিছু মিলে উল্লেখ্য যে, ইন্ডাস্ট্রি পর্যায়ে জুতা উৎপাদনের জন্য বৈষয়িক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। উৎপাদন পদ্ধতির উপর বিস্তারিত পড়াশোনা করে নিলে জামাল সাহেবের মত উদ্যোক্তাদের পক্ষে রপ্তানী বাজারে শক্ত অবস্থান অধিকার করা সম্ভব।